পবিত্র মক্কা মদিনার দিনগুলি: (পর্ব ৩)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মুজিবুল হক ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৫:৩৭ দুপুর
.... ষষ্ঠ তলা হতে উপরের বাকী তলাগুলি হোটেল হিসাবে ব্যবহার হয়. কুতুবের দোকানে যাওয়ার পর সেকি রেখে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলনা সে অনেক আদর আপ্যায়নের পর আমাকে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা উপহার দেয় এবং ওয়াদা করায় সময় ও সুযোগ পেলেই যেন তা দোকানে যাই . অবশেষে তার দোকান থেকে ফিরে এশার নামাজ পড়ে হোটেলে ফিরে আসি. ১৯শে অক্টোবর ২০১২ শুক্রবার. পবিত্র মক্কায় আমাদের প্রথম জুমা সকাল ১০টার মধ্যেই জুমার প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদুল হারামের দোতালায় অবস্হান নিই. এর মধ্যেই মসজিদ পরিপূর্ণ হয়ে গেছে হজ্বের আগে এটি শেষ জুমা. দুপুর ১২টার কিছু পর আজান হলো এর কিছু পর শুরু হলো বয়ান এবং খুতবা একটানা ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত. এরপর নামাজের আগে মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয় নামাজে ইমামতি করেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শায়খ আবদুর রহমান আল সুদাইস. তথ্য অনুযায়ী সেদিন ঐ জামাতে ২০ লক্ষাধিক মুসল্লী হাজির ছিলেন. এতবড় জামাতে তাও আবার মক্কা মোকাররমায় নামাজ পড়তে পেরে মহান আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া আদায় করলাম. বিপুল পরিমাণ মুসল্লীর উপস্হিতির কারনে নামাজ শেষে হোটেলে আসতে সময় লেগেছিল প্রায় এক ঘন্টা,
মসজিদুল হারামে জুমার নামাজ শেষে
হোটেলে এসে লাঞ্চ করার পর বিছানায় একটু গড়াগড়ি দিতেই আছরের আজান দেয়া শুরু হয়
মসজিদুল হারামে জুমার নামাজ শেষে
পার্শ্ববর্তী মসজিদে নামাজ আদায় করে হোটেলে এসে সবার সাথে চা পান করি ভেবেছিলাম মাগরিবের আগে মসজিদুল হারামে যাব কিন্তু কিছুক্ষণ পর খালাত বোন পপি ও তার স্বামী আসে এরপর স্রোতের মত এক এক করে এখানে অবস্হানরত আত্মীয়রা আসতে থাকে.
পবিত্র সাফা মারওয়ায়
পবিত্র মক্কা ও মক্কার আশেপাশে অবস্হান রত আমাদের আত্মীয় স্বজনের বহর দেখে আমাদের হজ্ব কাফেলার বাকী হাজীরা তো বটেই আমি এবং আমার মা ও রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছি. প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন আত্মীয় আমাদের কাছে আসতেন এবং তাদের সাথে চলে যাবার জন্য আকুতি করতেন হজ্বের পর এর মাত্রা আরো বেড়ে যায় আমাদের সাথে যারা সাক্ষাত করতে আসতেন একটি বিষয়ে সবার মিল ছিল তা হলো আসার সময় সবার হাতে ফলের কার্টন ও জুসের বোতল থাকতো. আমার মা পান খায় তাই পানও আনতো আমার জন্য আমার প্রিয় ব্র্যান্ড গোল্ড লীফ সিগারেটও বাদ যেত না. তারা যে পরিমাণ খাদ্য পণ্য আনত তা পুরো হোটেল ফ্লোরের সবাই খাওয়ার পরেও অবশিষ্ট থাকত তাদের এসব পণ্য আনতে বারবার বারন করা সত্বেও মানেনি .
পবিত্র সাফা মারওয়ায়
এখানে অবস্হান রত সকল আত্মীয়রা আমার নানার বাড়ী আধুনগর ও চুনতী এলাকার. হজ্বের পর আমার খালাত বোন পপি আমার মাকে তার বাসায় নিয়ে যায়. তাদের বাসা ছিল মক্কা শরীফের পাশে লাগোয়া পাথুরে পাহাড় "জবল আল জিয়াদ" এর সর্বোচ্চ চূড়ায় ওখান থেকে নিচে তাকালে চলন্ত গাড়ী গুলিকে পিপড়ার সারি বলে মনে হয়. আমিও এক রাত ছিলাম পরে সেখানে আমার মা আছে শুনে আরেক খালাত বোন শানু জেদ্দা থেকে ছুটে আসে.
দেখতে দেখতে হজ্বের দিন ঘনিয়ে এলো..
আল মারওয়া পাহাড়ের উপর
২৩শে অক্টোবর ২০১২ মঙ্গলবার রাতে এশার নামাজ শেষে আমরা পবিত্র হজ্বের প্রথম ধাপ পবিত্র মিনা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানার প্রস্তুতি নিলাম যদিও পবিত্র মিনা শরীফে যেতে হয় হজ্বের আগের দিন সূর্য্যোদয়ের পূর্বে মক্কার কেন্দ্রস্হল থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে এদিন অস্বাভাবিক যানজট থাকে প্রায় ৫০ হাজার হাজী বহনকারী বাস ও লক্ষাধিক অন্যান্য যান যানবাহন এক পথে এক গন্তব্যে একই সময় চলাচল করে বিধায় এই যানজট সৃষ্টি হয় তাই সৌদি হজ্ব মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে একদিন আগেই কোন কাফেলার বাস কয়টায় যাবে নির্দেশনা দেয়া হয় এখানে পবিত্র মক্কার আল মসজিদ আল হারামের প্রধান প্রবেশ পথ বাব আস সালামের দিক থেকে জামারাহ হয়ে পবিত্র মিনার দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার হেঁটেও যাওয়া যায় তবে এদিন এই পথ বন্ধ রাখা হয়. পবিত্র মিনা শরীফ যাত্রার পূর্বে আমরা সকল হাজী এহরাম পরিধান করে একত্রিত হলাম এবং প্রধান মোয়াল্লেমের নির্দেশ অনুযায়ী অনুসরণ করতে লাগলাম. সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা. সত্যি বলতে কি এহরাম পরিধান করার পর যখন হজ্বের নিয়ত ও দোয়া পড়লাম তখন মনে হলো আমি বা আমরা দুনিয়াবাসী হতে আলাদা হয়ে অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে গেলাম যা কোন ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় ... হজ্ব তিন প্রকার, ইফরাদ কিরান ও তামাত্তু.. . ইফরাদ ও কিরান হজ্বের নিয়মানুসারে যারা এই হজ্বের নিয়ত করবে তারা যাত্রা শুরুর সময় হতে কোরবানি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এহরাম মুক্ত হতে পারেননা . ইফরাদ ও কিরান হজ্ব সাধারনত স্হানীয় ও আশেপাশের আরব দেশের লোক এবং অন্য দেশের ক্ষেত্রে আলেম ও বুজুর্গ ব্যাক্তিরাই করেন. আমরা তামাত্তু হজ্ব করবো বিধায় দেশের বিমান বন্দর থেকে যাত্রার আগে ওমরাহ হজ্বের নিয়ত করে এহরাম পরিধান করি অতপর ওমরাহ হজ্ব শেষে এহরাম ত্যাগ করি.. তাই তামাত্তু হজ্বের জন্য আমরা এহরাম পরিধান করে হজ্বের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি. রাত ১০টায় গাড়ী ছাড়ল. আমাদর হজ্ব অফিসিয়ালরা আগেই বলে দিয়েছিলেন যে ১৫/২০ মিনিটের এই রাস্তার সফর কমপক্ষে ৬ ঘন্টার অধিক হতে পারে সুতরাং সেই মানসিকতা নিয়েই গাড়ীতে আরোহন করলাম. তিনটির স্হানে বাস দেয়া হলো দুটি কারণ একটাই, সড়কে অধিক গাড়ীর চাপ কমানো. আমার মাকে বসিয়ে আমি দাড়ানো অবস্হায় রইলাম. আমাদের বহন কারী বাসটির নাম "আবু শারদ বাস কোম্পানী" ওই কোম্পানীর সিরিয়াল অনুযায়ী এটি সিরিয়াল নং ১২০/৮৫২৩.
আবু শারদ, হজ্নাব কাফেলার বাস
না জানি এই কোম্পানীর কতগুলি বাস আছে. শুধু মাত্র হজ্ব উপলক্ষেই এই ধরনের ২০টির অধিক বাস কোম্পানী আছে. নামেও আছে ভিন্নতা যেমন আবু শারদ, আল তমিমি, সাফটকো, কোয়াফিল, হাফিল, আল গুরাইবি, দাল্লাহ ইত্যাদি তিন মাসের হজ্ মওসুমের জন্য মিশর থেকে খন্ডকালীন চালক নিয়োগ দেয়া হয় হজ্ব মওসুম শেষে এসব চালক দেশে ফিরে যায় আর গাড়ী গুলি বাকী নয় মাস অলস পড়ে থাকে.. এছাড়াও কুয়েত. কাতার, আমীরাত, ওমান, বাহরাইন, মিশর, তুরস্ক, জর্দান সহ কমপক্ষে ৩০টি দেশের হজ্ব কাফেলা বাহী বাসের সংখ্যাও প্রায় কয়েক হাজার. তাছাড়া পবিত্র আরাফাত হতে পবিত্র মিনার জামারাহ পর্যন্ত দ্রুতগামী ট্রেনের ব্যবস্হা তো আছেই সে বিষয়ে পরে আসছি. গাড়ী চলছে তার আপন গতিতে প্রথম ৪/৫ কিলোমিটার স্বাভাবিক ভাবেই পার করলাম এর পরেই শুরু হলো প্রচন্ড যানজট চালকের আসনে এহরাম পরিধান অবস্হায় মিশরীয় চালক. খুব সম্ভবত শুধুমাত্র গাড়ী চালানোতেই দক্ষ পথ ঘাট কিছুই চিনেনা....
বিষয়: বিবিধ
১১৫৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিও একসময় ধূমপায়ী ছিলাম,তবে ছেড়েছি। আল্লাহর ঘরে গিয়েও আপনার ঐ ‘গোল্ডলিফ’ছেড়েছে কি না জানতে মঞ্চায়!
মন্তব্য করতে লগইন করুন